জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন: জলাতঙ্ক সম্পর্কে আপনার যা অবশ্যই জানা উচিত
![]() |
বাংলাদেশী জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন ( Rabix- vc : Incepta Pharma) |
জলাতঙ্ক কী?
জলাতঙ্ক (Rabies) একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বাদুড়সহ অন্যান্য উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ে ছড়ায়। একবার সংক্রমিত হলে মৃত্যুহার প্রায় শতভাগ। তবে সময়মতো ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
জলাতঙ্কের কারণ:
জলাতঙ্ক ভাইরাসটি প্রধানত নিম্নোক্ত প্রাণীদের মাধ্যমে ছড়ায়:
গৃহপালিত প্রাণী:
- কুকুর
- বিড়াল
গৃহ-পরিবেষ্টিত প্রাণী:
- গরু
- মহিষ
- ছাগল
- ভেড়া
- শূকর
- গাধা
- ঘোড়া
- উট
বন্য প্রাণী:
- শেয়াল
- বানর
- নেকড়ে
- বাদুড়
- ইঁদুর
- কাঠবিড়ালি
- বেজি
- চিকা
- বনবিড়াল
- খরগোশ
কখন জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে হবে?
১. পূর্ব সতর্কতামূলক (Pre-exposure Immunization): বিশেষত যেসব ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত তারা এই ভ্যাকসিন নিতে পারেন। যেমন:
- পশু চিকিৎসক
- পশু গবেষণাগারের কর্মী
- বন্যপ্রাণী উদ্ধারকর্মী
- শিকারী ও বন কর্মী
- শিশু, যারা জলাতঙ্ক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে
ডোজ:
- প্রথম ডোজ: ০ দিন (Day 0)
- দ্বিতীয় ডোজ: ৭ দিন (Day 7)
- তৃতীয় ডোজ: ২১ বা ২৮ দিন (Day 21/28)
- বুস্টার ডোজ: প্রতি ৫ বছর অন্তর (যদি প্রয়োজন হয়)
২. কামড় বা আঁচড়ের পর (Post-exposure Immunization): যদি কোনো জলাতঙ্ক বাহক প্রাণী কামড় দেয় বা আঁচড় দেয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন নিতে হবে।
কামড়ের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসা
ক্যাটাগরি | বর্ণনা | চিকিৎসা |
---|---|---|
ক্যাটাগরি ১ |
প্রাণীর স্পর্শ, খাদ্য বা পানীয় লেহন | ভ্যাকসিন প্রয়োজন নেই |
ক্যাটাগরি ২ |
চামড়ার উপর আঁচড় বা চিরুনির দাগ |
ভ্যাকসিন দিতে হবে |
ক্যাটাগরি ৩ |
কামড়ের মাধ্যমে রক্তপাত | ভ্যাকসিন + ইমিউনোগ্লোবিউলিন |
ভ্যাকসিন নেওয়ার নিয়ম
- Day 0: প্রথম ডোজ
- Day 3: দ্বিতীয় ডোজ
- Day 7: তৃতীয় ডোজ
- Day 14: চতুর্থ ডোজ
- Day 28: পঞ্চম ডোজ
ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রয়োগ
যদি কামড় গুরুতর হয় (ক্যাটাগরি ৩), তাহলে ভ্যাকসিনের পাশাপাশি Rabies Immunoglobulin (RIG) প্রয়োগ করতে হবে। RIG সরাসরি ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি অংশ মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে।
কারা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে পারবেনা?
- প্রি-এক্সপোজার বা সতর্কতামূলক জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন এর ক্ষেত্রে তীব্র জ্বর বা সংক্রমণ থাকলে দেওয়া যাবে না
- যাদের র্যাবিস ভ্যাকসিনে অ্যালার্জি আছে
পোস্ট-এক্সপোজার বা কামড়ানোর পরে ক্ষেত্রে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই কারণ জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী রোগ।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে পারবে কী?
- জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ।
- স্তন্যদানকারী মা-ও প্রয়োজনে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- হালকা জ্বর
- ইনজেকশন স্থানে ব্যথা ও লালচে ভাব
- মাথা ঘোরা
- বমি বমি ভাব
- অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (খুবই কম)
সংরক্ষণ
- ২°C থেকে ৮°C তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।
উপসংহার
জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সময়মতো সঠিক ডোজে ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে এ রোগ থেকে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই, জলাতঙ্ক সন্দেহভাজন প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের পর অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাকসিন নিতে হবে।
Disclaimer: এই ব্লগটি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা। সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
No comments:
Post a Comment
We value your insights! Feel free to share your thoughts, ask questions, or provide feedback. Please keep comments relevant and respectful. Spam or promotional content will be removed.