Popular Posts

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes)

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes)  বিস্তারিত 

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) এর লক্ষণ,  চিকিৎসা,  জটিলতা
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) 


গর্ভাবস্থায় অনেক নারী শারীরিক ও হরমোনজনিত নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। এ সময় কিছু নারী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা Gestational Diabetes Mellitus (GDM)-এ আক্রান্ত হতে পারেন। এটি এমন একটি অবস্থার নাম, যেখানে গর্ভাবস্থার সময় প্রথমবারের মতো রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা বেশি হয়ে যায়।


গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কী?

Gestational Diabetes হলো একটি অস্থায়ী ডায়াবেটিস, যা শুধু গর্ভাবস্থার সময় হয় এবং শিশুর জন্মের পর সাধারণত সেরে যায়। তবে, এটি ভবিষ্যতে মা ও সন্তানের জন্য কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।


 কেন হয় এই ডায়াবেটিস?

গর্ভাবস্থায় শরীরে কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ইনসুলিন আমাদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে গ্লুকোজ জমে যেতে থাকে, ফলে ডায়াবেটিস হয়।


ঝুঁকিপূর্ণ কারা?

নিম্নোক্ত নারীরা GDM-এর ঝুঁকিতে থাকতে পারেন:

  • ২৫ বছরের বেশি বয়সী গর্ভবতী নারী
  • পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে
  • আগের গর্ভাবস্থায় বড় শিশু (৪ কেজির বেশি) জন্ম হলে
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা থাকলে
  • আগে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে


 লক্ষণ: 

Gestational Diabetes সাধারণত লক্ষণবিহীন হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:


  • অতিরিক্ত পিপাসা লাগা
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • ক্লান্তি বোধ
  • ঝাপসা দেখা


তবে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেই এটি ধরা যায়।


কীভাবে নির্ণয় করা হয়?

গর্ভাবস্থার ২৪–২৮ সপ্তাহের মধ্যে Oral Glucose Tolerance Test (OGTT) বা অন্য গ্লুকোজ পরীক্ষার মাধ্যমে GDM নির্ণয় করা হয়।


 চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:

Gestational Diabetes নিয়ন্ত্রণ করা যায় সঠিক জীবনধারা অনুসরণ ও চিকিৎসকের পরামর্শ মানার মাধ্যমে।


  •  স্বাস্থ্যকর খাবার খান (কম চিনি ও কম চর্বিযুক্ত খাবার)
  •  নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন (যেমন হাঁটা)
  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন
  •  কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হতে পারে


গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের জটিলতা

যদি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে যেতে পারে। এতে মা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের (C-section) প্রয়োজনও হতে পারে।


 শিশুর জন্য সম্ভাব্য জটিলতা:

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে শিশুর জন্য নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে:


 অতিরিক্ত ওজন নিয়ে জন্ম:

রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে শিশুর শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে, ফলে শিশুর ওজন ৯ পাউন্ড (প্রায় ৪ কেজি) বা তার বেশি হতে পারে। এ ধরনের বড় শিশুদের স্বাভাবিকভাবে প্রসব করানো কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে প্রসবকালে আঘাত লাগতে পারে বা সিজারিয়ান প্রয়োজন হতে পারে।


 আগেভাগে জন্ম (প্রি-টার্ম বার্থ)

উচ্চ রক্তে চিনি গর্ভে থাকলে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো শিশুর ওজন বেশি হলে ডাক্তার আগেভাগেই ডেলিভারি পরামর্শ দেন।


শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা:

আগে জন্ম নেওয়া শিশুরা Respiratory Distress Syndrome-এ ভুগতে পারে, যা শ্বাস নিতে কষ্ট করে তোলে।


রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া (Hypoglycemia):

শিশুর জন্মের পরপরই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খুব কমে যেতে পারে। যদি এই হাইপোগ্লাইসেমিয়া গুরুতর হয়, তাহলে শিশুর খিঁচুনি (seizure) হতে পারে। দ্রুত বুকের দুধ বা ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্লুকোজ দিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।


স্থূলতা ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস:

এই শিশুরা বড় হয়ে স্থূলতা (Obesity) এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।


 মৃত জন্ম (Stillbirth)

যদি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে গর্ভেই বা জন্মের পরপরই শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে।


গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ভয় পাওয়ার কিছু নয়, তবে গুরুত্ব না দিলে জটিলতা বাড়তে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপ, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা মানা খুবই জরুরি। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন—সন্তানের আগমনের জন্য নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করুন।

No comments:

Post a Comment

We value your insights! Feel free to share your thoughts, ask questions, or provide feedback. Please keep comments relevant and respectful. Spam or promotional content will be removed.